শান্ত বণিক, বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মেধাবী ছাত্রদের সংগঠন। এই সংগঠনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে হবে। ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অতীতে জীবন দিয়ে দেশ ও জাতির সংকটে অবদান রেখেছে।
গত সোমবার মনোহরদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত মনোহরদী উপজেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমার যৌবনের প্রথম প্রেম, প্রেরণার উচ্ছ্বাস, গৌরবের সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে জানাই শুভেচ্ছা। তিনি বলেন, শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা হাজার বছরের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫’র ঘাতকের হাতে নিহত শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাই ছাত্রলীগের সব প্রয়াত নেতাকর্মীকে। বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষেই মূল দল আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা হওয়া এই ছাত্রলীগের বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের উন্মেষকাল মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন ‘মহান ভাষা আন্দোলন’ এ নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে রক্তাক্ত ও সংগ্রামী যাত্রা পথের সূচনা হয়। এরপর থেকে সংগঠিত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ তার এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সফল হয়। আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী, শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ছাত্রলীগের গৌরবদীপ্ত ও অবিস্মরণীয় ভূমিকা আজ সর্বজনস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অবদান ছাত্রলীগের ইতিহাসকে দান করেছে অনন্য বৈশিষ্ট। জাতির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রলীগ একটি সংগঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে ওঁৎপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত করতে অত্যন্ত সফলভাবে সমর্থ হয়।
একটি সংগঠন হিসেবে দুর্জয়ী কাফেলায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য হারাতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী। সংগঠনের অসংখ্য শহীদ, অগণিত নেতাকর্মীর জেল-জুলুম-কারাবরণ, নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ, আর নেতাকর্মীদের এক নদী রক্তের বিনিময়ে রচিত হয়েছে এক সফল রক্তাক্ত ইতিহাস ও স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পরে প্রথমে খুনি মোশতাক সরকার ও পরে সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলেও জেল-জুলুম-হুলিয়ার শিকার হয়ে অগণিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে কারাবরণ, দেশত্যাগ, অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। সারা দেশের ন্যায় মনোহরদীতেও ছাত্রলীগে আগেও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবারও মেধাবী ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও মনোহরদী পৌরসভার মেয়র মো. আমিনুর রশিদ সুজন এ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলন উদ্বোধন করেন নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম. জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, মনোহরদী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মু. ফজলুল হক, জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল মজিদ মাহমুদ স্বপন, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াশীষ রায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ফারুক প্রমুখ।
প্রধান বক্তা ছিলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন। সম্মেলনে মো. সাইদুর রহমান শফিকুল সভাপতি ও মামুনূর ইসলাম নাঈমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।